ভুল ধারণাগুলো যে কেবল তরুণদের থাকে, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। বরং নারীদেহের ব্যাপারে সকল বয়সী পুরুষদের মাঝেই নানান রকমের ভ্রান্ত ধারণা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, নারী যে কোন সময়েই যৌনতা উপভোগ করে বা ধর্ষণ নারীর জন্য আনন্দদায়ক।
পিরিয়ড এবং সন্তান জন্মদান বিষয়েও অসংখ্য ভুল ধারণা আছে অধিকাংশ পুরুষের এবং এসব ভুল ধারণা অনেক দিক থেকেই নারী নির্যাতন ও ধর্ষণকে উসকে দেয়।
সেরকম ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা বদলে দিতে এই ফিচার।
১) যৌন সম্পর্ক ছাড়া 'হাইমেন' নষ্ট হয় না
যোনির মুখে যে পাতলা পর্দা থাকে, সেটাকে হাইমেন বা বাংলায় সতীচ্ছেদ বলা হয়। প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী এই পর্দা অটুট থাকলে নারী কুমারী এবং পর্দা ছিঁড়ে গেছে মানে নারী অসতী। তাই এই একবিংশ শতকে এসেও বিয়ের প্রথম রাতে রক্তাক্ত বিছানা দিয়ে নারীর সতীত্ব বিচার করে উপমহাদেশের অনেক মানুষ। এটি শতভাগ ভুল ধারণা! যৌন সম্পর্ক ছাড়াও কঠোর কায়িক শ্রম বা ব্যায়ামের কারণেও হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে। অনেকে অপূর্ণ হাইমেন বা হাইমেন ছাড়াও জন্মগ্রহণ করতে পারে।
২) ধর্ষণ নারী উপভোগ করে
অসংখ্য পুরুষ এটাই মনে করে যে নারীরা মনে মনে ধর্ষণ কামনা করেন এবং ধর্ষণ ইচ্ছা থেকেই সাজসজ্জা করে থাকেন। এটি অত্যন্ত কুৎসিত একটি ভুল ধারণা। ধর্ষণ নারীর জন্য সবচাইতে ভয়াবহ একটি ব্যাপার এবং কোন পরিস্থিতিতেই কোন নারী ধর্ষণ উপভোগ করেনা।
৩) নারীর নিজস্ব যৌন চাহিদা ও অরগাজম নেই
পুরুষের ইচ্ছাই নারীর ইচ্ছা, পুরুষের অরগাজমেই নারীর সমাপ্তি- অসংখ্য পুরুষ এমন ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই থাকেন। ভয়ে কখনোই সঙ্গিনীর যৌন ইচ্ছাকে তারা প্রাধান্য দেন না কিংবা সঙ্গিনীর অরগাজম হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবেন না। সত্যটি হচ্ছে, নারীর যৌন চাহিদা পুরুষের সমান বা বেশিও হতে পারে এবং নারীর অরগাজমে পুরুষের চাইতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।
৪) স্তন মাতৃদুগ্ধে পুর্ন থাকেনা
না, কোন নারীই মাতৃদুগ্ধে পূর্ণ স্তন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সন্তান জন্মদানের পর স্তনে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন শুরু হয়।
৫) পিরিয়ড শুরু হয়েছে মানেই যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরি
একজন বালিকার পিরিয়ড শুরু হয়েছে মানেই সে যুবতী নয় এবং যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরি নয়। পিরিয়ড খুব স্বাভাবিক একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার, সাধারণত ১২ থেকে ১৫ বছরের মাঝেই বালিকা দেহে পিরিয়ড উপস্থিত হয়, কারো ক্ষেত্রে আরও আগে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পিরিয়ড হয়েছে বলেই ছোট কিশোরী মেয়েটি বিয়ে বা যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরি।
৬) মেনোপজ কেবলই নারীর হয়
নারীর একার নয়, মেনোপজ পুরুষেরও হয়। মেনোপজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যৌনতায় অনাগ্রহ ইত্যাদি সকল ব্যাপার পুরুষের জীবনেও উপস্থিত হয়।
৭) নারীর পাঁজরের হাড় পুরুষের চাইতে একটি কম
এটিও একটি ভুল ধারণা, নারী ও পুরুষ দেহে সমান সমান পাঁজরের হাড় থাকে।
৮) পিরিয়ডের সময়ে যৌন সম্পর্ক করা যায় না
পিরিয়ডের সময় যৌন সম্পর্ক করা যায় এবং অসংখ্য নারীর পিরিয়ডের সময়ে যৌন ইচ্ছা প্রবল থাকে।
৯) নারী দেহে লোম থাকে না
অসংখ্য পুরুষ মনে করেন সুন্দরী নারীদের দেহে লোম থাকে না, তারা লোম ছাড়াও জন্মগ্রহণ করে থাকেন। অন্যদিকে যেসব নারীদের দেহে লোম আছে, তারা কুৎসিত বা 'পুরুষ পুরুষ' ভাব সম্পন্ন। সত্য হচ্ছে, লোম সকলের দেহেই থাকে। নারীরা ওয়াক্সিং , থ্রেডিং ইত্যাদির মাধ্যমে লোম দূর করে থাকেন।
১০) নারীর ব্লাডার পুরুষের তুলনায় ছোট হয়
পুরুষের তুলনায় নারীরা টয়লেট বেশি ব্যবহার করেন, এর অর্থ এই নয় যে নারীর ব্লাডার পুরুষের চাইতে ছোট ।
১১) পিরিয়ডে কষ্ট হয় না
কেবল তাই নয়, অনেক পুরুষ এটাও মনে করেন যে পৃথিবীর সমস্ত নারীর পিরিয়ড একই দিনে হয়। দুটিই অত্যন্ত ভুল ধারণা।
১২) সন্তান জন্ম দেয়া এমন কোন ব্যাপার নয়
এটির চাইতে ভুল ধারণা আর হতেই পারে না। সন্তান জন্ম দেয়া নারীর জন্য অসম্ভব কষ্টকর একটি প্রক্রিয়া। অসংখ্য শারীরিক পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে যেতে হয় একজন নারীকে যা অত্যন্ত কষ্টকর। স্বাভাবিক নিয়মে ডেলিভারি হোক বা সি সেকশন, দুটিই সমান। কেবল শারীরিক কষ্ট নয়, সন্তান জন্ম দেয়ার সময়ে নানান রকমের মানসিক পরিবর্তন আসে। ডিপ্রেশন দেখা দেয়। সন্তান জন্মের আগে ও পরে যে কোন নারীরই চাই অনেক বেশি বাড়তি যত্ন।
এমন আরও অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা আছে শিক্ষিত- অশিক্ষিত সকল শ্রেণীর পুরুষের মাঝেই। যুগ বদলাচ্ছে, সঠিক ব্যাপারটি জানা জরুরী। নারীকে জানতে ও বুঝতে না শিখলে নিজের সঙ্গিনীকে আজীবন অচেনাই থেকে যাবে।
Comments
Post a Comment